নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে চলমান পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সভার দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। সভায় ভার্চুয়ালি অংশ নেন জয়।
এদিন ‘বহুমাত্রিক ঝুঁকি মোকাবেলা এবং উন্নয়নের টেকসই লক্ষ্য অর্জনে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনায় মূল বক্তা ছিলেন জয়।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের জিডিপি চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে উল্লখ করে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যেও আমরা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে অতিক্রম করেছি; ২০২০ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২,২২৭ মার্কিন ডলারে।”
ভার্চুয়াল এ সভার বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) নূর এলাহি মিনা।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশের’ সাফল্য তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ফলে কোভিড-১৯ মহামারীতে লকডাউনের মধ্যে বাংলাদেশ দ্রুত অনলাইন সরকার ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও অনলাইন কর্মপরিবেশে নিজেদেরকে পরিবর্তিত করতে পেরেছে।
“দেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক কোভিড শনাক্তকরণ পদ্ধতি এবং সরাসরি কোভিড তথ্য-সহায়তা চালু করার ফলে সবচেয়ে কম সংক্রমণ হারের দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অবস্থান করছে।”
এক যুগ আগের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সেসময় বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ডের ব্যবহার ছিল অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র শুন্য দশমিক তিন ভাগ। আজ ১২ বছর পরে দেশের জনসংখ্যার ৭০ ভাগ অর্থাৎ ১১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ সুলভে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, ।”
এই সাফল্যের পেছনে সরকারের ব্যাপক অর্থায়নের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে বিনিয়োগ ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বলেন, “সরকার তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো বিনির্মাণে বিগত কয়েক বছরে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ৩০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক কেবল সারাদেশে স্থাপন করা হয়েছে। দেশের ৯০ ভাগ এলাকা ফোর-জি নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে; আমরা ফাইভ-জি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ স্থাপনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে দেশের দুর্গম এলাকা ও দীপাঞ্চল নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে।
দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, এসব সেন্টার পরিচালনায় নারীসহ ব্যাপক উদ্যোক্তা সৃষ্টি, ডিজিটাল জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যাপক তথ্য-ব্যাংক সৃষ্টি, মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাতা পরিশোধ, ই-সরকার, ই-নথি, ই-জুডিশিয়ারি, টেলি ও অনলাইন স্বাস্থ্য সেবা, সরকারি দপ্তরের মধ্যে ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থা, জাতীয় হটলাইন স্থাপনসহ বাংলাদেশে নাগরিক জীবনধারার প্রতিটি স্তরে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও জানান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
“প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আইটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব স্কুলেই শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। সরকার দুই ২০ লাখের বেশি নাগরিককে বিভিন্ন আইটি প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ডিজিটালি পশ্চাদপদ একটি দেশ থেকে বাংলাদেশকে ক্ষমতাসীন সরকার একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছে,” বলেন জয়।
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব উপায়ে ও স্বল্প খরচে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী জ্ঞান ব্যবহার করে ডিজিটাল পদ্ধতি ও সেবা সৃষ্টি করতে পেরেছে। পৃথিবীর কোনো দেশ দ্রুত ডিজিটাল পদ্ধতিতে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে আমরা আমাদের সেবা ও বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছি।”
সভায় ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল হোলিন ঝাউ-ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্যানেল আলোচনায় জাতিসংঘ সংস্থা ও নাগরিক সমাজের সদস্য এবং শিক্ষাবিদরা অংশ নেন।
এছাড়া সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরাও বক্তব্য দেন।
সভায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশের সামগ্রিক অর্জন ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানান।
সমৃদ্ধ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ ও দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতে ইন্টারনেট সংযোগ, ই-গভর্নেন্স, ই-বিজনেসের ব্যাপক প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বের কথাও তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি।
জাতিসংঘ পঞ্চম এলডিসি সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির সভা শুরু হয়েছে গত ২৪ মে, যা ২৮ মে শেষ হবে। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা এবং কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত বব রে।
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম